• ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
logo
লাইলাতুল কদরে যা করণীয়
লাইলাতুল কদর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। আরবি ভাষায় লাইলাতুল অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং কদর শব্দের অর্থ মর্যাদা বা সম্মান। এ ছাড়াও এর অন্য অর্থ ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতের মাধ্যমে মুসলমানদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। লাইলাতুল কদর বা শবেকদর হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাত হাজার বছরের চেয়ে উত্তম। শবেকদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন। এ রাতে ইবাদতের সৌভাগ্য লাভ হলে আল্লাহতায়ালা অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, শবেকদরের রাত্রে দাঁড়ায়, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি)। গোনাহ থেকে মাফ চাওয়া : মহান আল্লাহর কাছে গোনাহ থেকে মাফ চাইতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের দোয়া শিখিয়েছিলেন। রমজানের শেষ দশকে এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে- উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুওয়ুন; তুহিব্বুল আ’ফওয়া; ফা’ফু আন্নি।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত) জামাতে এশা ও ফজর নামাজ আদায় : কদরের রাতের ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য বেশির ভাগ মুসলিম সারারাত জেগে নফল নামাজ পড়েন, ইবাদত করে থাকেন। সেক্ষেত্রে জামাতে ফজরের নামাজ পড়া জরুরি। কেননা নফল ইবাদতের চেয়ে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শবে কদরে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করতে হবে। কোনোভাবেই যেন জামাতের নামাজ ছুটে না যায়। কাজা নামাজ পড়া : সারাবছর নানা কারণে অনেক নামাজ কাজা হয়ে যায়। অনেকে সফরে থাকার সময় নামাজ আদায় করতে পারে না। তাই রমজানের শেষ ১০ দিন ফরজ নামাজের কাজা আদায় করা উত্তম। কোরআন তেলাওয়াত করা : লাইলাতুল কদর রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আল কোরআনের বিধান পালনের মাধ্যমে এ রাত অতিবাহিত করা উচিত। কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত-বন্দেগিতে রমজানের শেষ দশক অতিবাহত করা। ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা : কদরের রাতে ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। এ রাতটি নির্দিষ্ট নয়, সেহেতু রমজানের শেষ দশকের পুরোটা সময় বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। বিবাদে লিপ্ত থাকলে অতীতের সব গুনাহ মাফ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। দোয়া করা : লাইলাতুল কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রাত। এ রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহর দরবারে পেশ করা জরুরি। যেন আল্লাহতাআলা বান্দার জন্য সর্বোত্তম ভাগ্য নির্ধারণ করেন এ রাতে। হাদিস পড়া : লাইলাতুল কদরের রাতে জ্ঞানার্জনের জন্য কোরআন ও হাদিসের পেছনে কিছু সময় ব্যয় করা। যে সামান্য সময়ের মর্যাদা অনেক বেশি। কম ঘুমানো : রমজানের শেষ দশকের ইবাদাত-বন্দেগি ও ইতিকাফের জন্য বিশ্বনবী ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। কারণ একটাই- লাইলাতুল কদর তালাশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। কারণ শেষ দশকের যে কোনো বিজোড় রাতেই লাইলাতুল কদর নিহিত থাকে। তাই কম ঘুমিয়ে ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে। কম খাবার গ্রহণ : রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগি করতে সুস্থ দেহ ও মন প্রয়োজন। বেশি খাওয়া হলে ঘুম ও ক্লান্তিতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই কম খেতে হবে।  
০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০২

আজ পবিত্র শবেকদর
পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবেকদর আজ। শনিবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এ রাতটি পালিত হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী পালন করবেন। মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন। পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। মুসলমানেরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিলের মধ্য দিয়ে শবে কদরের রজনী কাটাবেন। পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এ উপলক্ষে আগামীকাল রোববার সরকারি ছুটি থাকবে। সূত্র : বাসস
০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৭

লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের শেষ দশক শুরু
পবিত্র রমজান শুরুর পর ইতোমধ্যে প্রথম দুই দশক অর্থাৎ, রহমত ও মাগফিরাত শেষ হয়েছে। আজ থেকে শুরু হয়েছে নাজাতের দশক। এই নাজাতের দশকে এমন একটি রাতের কথা বলা হয়েছে, যেই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। কারণ, এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে পবিত্র কোরআন নাজিল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি একে (কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (সুরা কদর: ১-৩)  সাধারণত কদর রজনী শেষ দশকে হওয়াই বিশুদ্ধ অভিমত। হজরত আবু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সায়িদকে জিজ্ঞেস করেছি, সে আমার বন্ধু ছিল। তিনি বলেন, আমরা নবী করিম (সা.) এর সঙ্গে রমজানের মধ্য ১০ দিন ইতিকাফে ছিলাম। তিনি ২০ তারিখ সকালে বের হন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষণে বলেন, আমাকে কদরের রজনী দেখানো হয়েছিল, অতঃপর ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তোমরা তা শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো। আমি নিজেকে মাটি ও পানিতে সিজদা করতে দেখেছি। তাই যারা রাসুলের সঙ্গে ইতিকাফে ছিল, তারা যেন ফিরে আসে। তখন আমরা ফিরে এসেছি। আমরা আকাশে কোনো মেঘ দেখিনি। হঠাৎ একরাতে মেঘ এলো, বৃষ্টি হলো, মসজিদের ছাদ ভেসে গেল। তা ছিল খেজুরগাছের ঢালের এবং নামাজ শুরু হলো, তখন আমি রাসুল (সা.) কে দেখেছি, তিনি পানি ও মাটিতে সিজদা করছেন। এমনকি তার কপালে মাটির চিহ্ন ছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৬) শবে কদর অনুসন্ধান ও আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভে প্রত্যেক পাড়া-মহল্লার মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ইতোমধ্যে ইতিকাফে বসেছেন। ইতিকাফ হচ্ছে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও ক্ষমা লাভের এক অনন্য সুযোগ। রমজানের ইতিকাফ শুরু করতে হয় ২০ তারিখের সূর্যাস্তের আগ থেকে। আর তা শেষ হয় রমজান শেষ হলে। অর্থাৎ ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা গেলে বা ৩০ তারিখ পূর্ণ হলে। সুতরাং যারা রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, অনুকম্পা, ক্ষমা ও করুণার আশায় মসজিদে ইতিকাফ পালন করবেন, তারা আজ সন্ধ্যার মধ্যে মসজিদে যেয়ে অবস্থান নেবেন। ইতিকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা হাফেজ ইবনে রজব বলেছেন, ‘ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো- সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় যতো গভীর হবে, সম্পর্ক ও ভালোবাসা ততো নিবিড় হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে।’ শবে কদর তালাশ করতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে ইতিকাফে বসতেন। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে (রমজানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাজিল করে জানানো হলো যে, তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে। তারপর মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) তার সঙ্গে ইতেকাফে শরিক হয়।’ (মুসলিম শরীফ) মুহাক্কিক ইমামগণ বলেছেন, আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে ৯টি হরফ বা বর্ণ রয়েছে; আর সুরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় তিনবার রয়েছে; নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়, তাই (ছাব্বিশ দিবাগত) সাতাশ রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবলভাবে বিদ্যমান রয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি)। শবে কদরে নির্ধারিত ফরজ ইবাদতগুলো সযত্নে পালনপূর্বক সামর্থ্যমতো সর্বাধিক নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে আত্মমূল্যায়নসহ কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩০, হাদিস : ৩৪)।
৩১ মার্চ ২০২৪, ১৯:৫০
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়